মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০২:৪৯ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
কাল ঢাকায় আসছেন ডোনাল্ড লু, যা বলছে প্রধান দুই দল ঢাকা মহানগর পুলিশের এক সহকারী কমিশনার বদলি বিএসএফের পোশাকে সীমান্তে মাদকের কারবার করতেন রেন্টু কুতুবদিয়ায় নোঙর করেছে এমভি আবদুল্লাহ ভারতে চতুর্থ দফা লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ ও কাশ্মিরে কেমন ভোট হলো বিভাজন থেকে বেরিয়ে এসে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা উচিত : মির্জা ফখরুল মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখা বেআইনি : হাইকোর্ট আমার পুরো ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গিয়েছিল : মনোজ মানবদেহে প্রথম ব্রেইনচিপ ইমপ্লান্টে ধাক্কা খেলো নিউরালিংক ফিলিস্তিনপন্থিদের বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ অধ্যাপক গ্রেপ্তার
কোথায় কীভাবে পাচার হচ্ছে বিপুল অর্থ

কোথায় কীভাবে পাচার হচ্ছে বিপুল অর্থ

স্বদেশ ডেস্ক:

অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ বিদেশে নিয়ে লুকানোর এবং কর ফাঁকির গোপন জগৎ নিয়ে অনুসন্ধানী যে রিপোর্ট সম্প্রতি প্রকাশ হয়েছে, তার নাম দেওয়া হয়েছে প্যান্ডোরা পেপার্স। যা নিয়ে এখন বিশ্বজুড়ে তোলপাড় চলছে। ১১ দেশের ৬০০ সাংবাদিক কয়েক মাস ধরে কাজ করে এক কোটি ২০ লাখ গোপন নথি ফাঁস করতে সমর্থ হন। এসব নথিতে দেখা গেছে বিশ্বের অত্যন্ত ক্ষমতাধর কিছু লোক অবৈধভাবে অর্জিত ধনসম্পদ, টাকা-পয়সা বিদেশে পাচার করে তা লুকিয়ে রেখেছেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন ৯০টি দেশের অন্তত ৩০০ জনেরও বেশি রাজনীতিক। এ ছাড়া ব্যবসায়ী, অভিনেতা, অভিনেত্রী, গায়িকা, খেলোয়াড়দের নামও এসেছে। কিন্তু কোথায় কীভাবে তারা এ অর্থ পাচার করছেন এবং গোপন রাখছেন? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে বিবিসি। গতকাল মঙ্গলবার শাকিল আনোয়ারের করা রিপোর্টে এসব প্রশ্নের বিষয়ে আলোকপাত করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সের কর্মকর্তা লক্ষী কুমারের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষমতাধর মানুষেরা বেশ কিছু দেশ এবং অঞ্চলে নিবন্ধিত নামসর্বস্ব বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে অর্থপাচার করে লুকিয়ে রাখতে সক্ষম হচ্ছেন। এ কাজে তাদের সাহায্য করছেন আইনজীবী, আ্যাকাউনটেন্ট এবং কেতাদুরস্ত সব পরামর্শক ও দালাল।

অনুসন্ধানী এ সাংবাদিকদের জোট আইসিআইজির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্যান্ডোরা পেপার্স নামে ওই রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে, পশ্চিমা বেশ

কয়েকটি শক্তিধর দেশের সরকারও হাজার হাজার কোটি ডলারের সম্পদ পাচার এবং কর ফাঁকির এ মহোৎসবে পরোক্ষ ভূমিকা রাখছে। আইসিআইজি বলছে, বিশ্ব অর্থনীতির ১০ শতাংশ পাচার হয়ে কয়েক ডজন ‘কর স্বর্গ’ অর্থাৎ প্রায় করবিহীন অঞ্চলে নিবন্ধিত হাজার হাজার কাগুজে কোম্পানির খাতায় জমা হচ্ছে। পরিণতিতে এসব দেশের সরকার বছরে কম বেশি ৮০ হাজার কোটি ডলার আয়কর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

কিন্তু কোথায় এসব কর স্বর্গ? কীভাবে গজায় হাজার হাজার এসব ‘শেল’ অর্থাৎ খোলসসর্বস্ব কোম্পানি? কীভাবে গোপন থাকে বিনিয়োগের নামে পাচার করা অবৈধ টাকার পাহাড়? রিপোর্ট বলছে, পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কর ফাঁকির সব নিরাপদ আস্তানা। এর ভেতর রয়েছে স্বাধীন সার্বভৌম কিছু দেশও- যেমন পানামা, নেদারল্যান্ডস, মাল্টা, মরিশাস। সেই সঙ্গে রয়েছে কয়েকটি দেশের অভ্যন্তরে কিছু অঞ্চল- যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়ার বা ওয়াইয়োমিঙ অঙ্গরাজ্য। আবার কোনো কোনো দেশ তাদের মূল ভূখণ্ডের বাইরে কিছু অঞ্চলকে এমন কর স্বর্গ করে রেখেছে- যেমন ব্রিটিশশাসিত ক্যারিবীয় দ্বীপ ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ বা কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জ।

এখন থেকে পাঁচ বছর আগে ‘পানামা পেপার্স’ নামে কর ফাঁকি নিয়ে ফাঁস হওয়া নথিপত্রে দেখা গিয়েছিল যে, পানামাভিত্তিক একটি আইন প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জে হাজার হাজার শেল কোম্পানি নিবন্ধনের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। এক হিসাবে, বিশ্বের ৬০টির মতো দেশ এবং অঞ্চল রয়েছে যেখানে এসব ‘খোলস’ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। এসব জায়গায় কোম্পানি করের হার খুবই কম। অনেক জায়গায় কর একবারেই দিতে হয় না। অবৈধ সম্পদ গোপন রাখতে বা কর ফাঁকির জন্য যেসব লাখ লাখ মানুষ যখন এসব খোলস কোম্পানি খোলেন, তখন তাদের কাছ থেকে ওইসব দেশ বা অঞ্চলের সরকার অনেক ফি পায়। প্রচুর আইনজীবী, অ্যাকাউনটেন্ট বা পরামর্শকের কাজের সুযোগ তৈরি হয়। কারা কর স্বর্গ ব্যবহার করেন, এ প্রশ্নের এক কথায় উত্তর হলো, বিশ্বের ধনী লোকজন। একই সঙ্গে অনেক মানুষ যারা ব্যাংকের ঋণ ফেরত দিতে বা কারও পাওয়া শোধ করতে চান না, তারাও তাদের টাকা-পয়সা কর স্বর্গগুলোতে নেওয়ার চেষ্টা করেন। সেই সঙ্গে রয়েছে ঘুষখোর, মাদক ব্যবসায়ী বা অস্ত্র চোরাচালানে জড়িত লোকজন। যারা তাদের অবৈধ আয় গোপন রাখতে উন্মুখ।

আমদানি রপ্তানির আড়ালে অর্থপাচার হয় যেভাবে

বড় বড় অনেক বহুজাতিক কোম্পানি যারা বিশ্বজুড়ে লেনদেন করে, তারাও কর ফাঁকির জন্য ‘কর স্বর্গে’ ভিন্ন নামে সহযোগী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খোলে বলে বহু প্রমাণ পাওয়া গেছে। কাগজে-কলমে ভাগ হয়ে যায় ব্যবসার লেনদেন ও মুনাফা এবং তাতে করে মূল কোম্পানির করের পরিমাণ কমে যায়। নাইকি বা অ্যাপেলের মতো কোম্পানির বিরুদ্ধেও ট্যাক্স হেভেন ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে, এ সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণও ফাঁস হয়েছে।

বিভিন্ন কর স্বর্গে নিবন্ধিত এসব নামসর্বস্ব কাগুজে কোম্পানি আদতে কোনো ব্যবসা না করলেও আইনের চোখে এগুলো বৈধ। এসব কোম্পানিতে সার্বক্ষণিক কোনো কর্মী, এমনকি কোনো অফিসও নেই। যেমনÑ আইসিআইজির গত বছরের এক রিপোর্টে বলা হয়, কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জে একটি ভবনেই ছিল ১৯ হাজার কাগুজে কোম্পানির ঠিকানা। এসব কোম্পানির নথিপত্রে মূল মালিকদের কোনো নাম ঠিকানা নেই। কিন্তু পর্দার আড়াল থেকে তারাই এগুলোতে বিনিয়োগ করা অর্থ লেনদেন করেন। তারাই কোম্পানির নামে নানা দেশে জমিজমা ঘরবাড়ি কেনেন, শেয়ার বাজারে টাকা খাটান। তাদের সাহায্যের জন্য রয়েছেন বহু আইনজীবী বা আ্যাকাউনটেন্ট। মোটা ফির বিনিময়ে তারাই বুদ্ধি জোগান, কাজ করে দেন।

অনেক ক্ষেত্রে এসব কোম্পানি খোলার খরচ অবিশ্বাস্যরকম কম এবং জটিলতা নেই বললেই চলে। আইসিআইজির এক রিপোর্ট অনুযায়ী, কোম্পানি খোলা এতই সহজ যে একটি ই-মেইল বা একটি ফোনকলেই কাজ হয়ে যায়। খরচ এবং কাগজপত্র বা সই-স্বাক্ষরের সংখ্যা নির্ভর করে কোথায় কোম্পানি খোলা হচ্ছে এবং কোন আইনজীবী এ কাজটি করে দিচ্ছেন তার ওপর। যেমন পানামা পেপার্স কেলেঙ্কারি ফাঁসের জেরে বন্ধ হয়ে যাওয়া পানামাভিত্তিক আইনজীবী প্রতিষ্ঠান মোসাক ফনসেকা কোম্পানি প্রতি ফি নিত ৩৫০ ডলার। তবে আইনজীবীদের এ ফি দু’হাজার ডলার পর্যন্ত হতে পারে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877